Mid Day Meal - A bengali story

Jolchobi

মিড ডে মিল

অঙ্কিতা কর

বিকাশ চুপিচুপি ভাড়ার ঘরে ঢুকলো ,পিছন পিছন মোটাসোটা তারাদিদি থপ থপ করতে করতে । আজ স্কুলের জন্য বরাদ্দ রয়েছে মোট ২০ কেজি চাল, ডিমের ৫ টা ট্রে, কুমড়োর ছক্কার জন্য ৪ টে বুড়ো বুড়ো কুমড়ো । তারাদিদি বললো,"এই যা আছে তুলে নাও, চালে ডালে খিচুড়ি করে দেবো, ডিম আজ দেবো না, তুমি বাপু চুপচাপ এগুলো নিয়ে কেটে পরো,হরিকে দিও,আর ওজন করে নিতে ভুল না,আধা বখরা কিন্তু আমার । মরদকে অনেক বলে কয়ে পার্টির বাবুদের ধরে হতচ্ছাড়া হেডমাস্টারটাকে বদলি করিয়েছি । আমাদের এত দিনের ব্যাবসা বন্ধ করতে বসেছিল । ভাবলাম শহরের লোক কিছু বোঝে না, কত আর টাকা পেতো এই প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারি করে । না ,উনি নিজের ভাত জোটাতে পারছেন না, মিড ডে মিলের খাবার যেনো এদিক ওদিক না হয় খোঁজ নিতে গ্যাছে । নাও, তাড়াতাড়ি করো, বাবা, আর কিছুক্ষণের মধ্যে স্কুল খুলবে ।"এক নিশ্বাসে কথাগুলো বললেন স্কুলের মিড ডে মিল রান্না করা তারাদিদি ।

বিকাশ নিজের বস্তাতে তাড়াতাড়ি ঢুকিয়ে নিচ্ছে জিনিষ গুলো । হটাত দরজার দিক থেকে "তারাদিদি",বলে কেউ ডেকে উতল । চমকে ঘুরলেন তিনি, কেউ নেই কোথাও । আবার কেউ ডাকলো । অবিকল আগের হেড মাষ্টারের গলা, যে শত বোঝানোতেও যখন তাদের সাহায্য করতে রাজি হইনি, বরং উচ্চ অথরিটি কে জানাতে চায়েছিল, তখন তাকে আটকানোর সবচেয়ে ঘৃণ্য উপায় নিয়েছিল তারা । অকৃতদার মানুষটাকে নিয়ে গ্রামে ছড়িয়ে দিয়েছিল তিনি নাকি স্কুলের কোনো এক ছোটো ছাত্রীকে শারীরিক নিগ্রহ করেছেন । আগের হেডমাস্টার যদিও বাচ্চাদের গায়ে হাত তুলতেন কিন্তু সেটা শুধু মাত্র তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য,অন্য কোনো উদ্দেশ্য সেই মানুষটার ছিল না । কিন্তু মানুষ সেটা বুজলেন না, স্কুল ঘেরাও করে হেড মাস্টারকে ঘর থেকে বের করে পিঠিয়েছিল উত্তেজনায় ঠিক ভুলের হিসেব হারানো জনতা । জরুরি বৈঠক ডেকে সেদিনই তাকে বদলি করা হয় অন্য একটি স্কুলে ।

"তারাদিদি, এক্ষন স্বভাব গেলো না, এই মুহূর্তে এই ঘর থেকে বেরিয়ে যাও । আর যদি কোনোদিন এই উদ্দেশ্য নিয়ে এই ঘরে আসার চেষ্টা করেছ,........ পরিণামের জন্য তৈরি থেকো ।" বিকাশ সব কিছু ফেলে বাইরে দৌড়লো । তারা দিদি এতক্ষণ কি করবে বুজছিল না, বিকাশ কে দেখে ছুটতে যাবে, আবার অদৃশ্য কণ্ঠ বললো "তুমি আর বিকাশ ছাড়া অন্য কেউ জানতে না পারে আমার কথা,নাহলে তোমার ছোটো ছেলেটা এবার ক্লাস ৫ এ উঠেছে না, এই বয়েসে ছেলেকে হারাতে নিশ্চয়ই ইচ্ছে করবে না"। তারা দিদি কাঁপতে কাঁপতে দৌড়ল ।
স্কুলের ঘণ্টা পড়েছে । কিচির মিচির করতে করতে স্কুলে আসছে আদপেটা, অভুক্ত কচিকচি মুখ গুলো দুপুরে অন্তত পেট ভরে খাবে তারা ।
এদের মুখ থেকে খাবার কাড়তে কি পরে পারে ওই নরকের কীট গুলো ।
অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাড়ালো কাল রাতে অপমানের বোঝা সহ্য করতে না পেরে গলায় দড়ি দেওয়া স্কুলের হেডমাস্টার, তিনি থাকতে আর কোনো মুখকে অভূক্ত থাকতে হবে না।

সমাপ্ত

© FB.com/ankita.kar.3939



Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn Pinterest StumbleUpon Email



~~ জলছবি ~~