Fnaki - A bengali story

Jolchobi

ফাঁকি

রত্না চক্রবর্তী

পশুপতি ভটচাজ আর তার গুরুর ছেলে মৃত্যুঞ্জয় মিলে পরিকল্পনা করে ছিল নিয়তিকে কাঁচকলা দেখাবার। বারবার বিচার করেছে দুজনে, একই ফলাফল জাতিকা স্বামীঘাতিনী হবেই। পশুপতির শিষ্যবাড়ির মেয়ে, একমাত্র মেয়ে অপরাজিতা, ছোট থেকে দেখছেন তিনি এই কৃষ্ণাসুন্দরীকে। এত কালো মেয়ে যে এত সুন্দরী হতে পারে কেউ না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবে না। জন্মের সময় তার মা বলেছিল " ভট্টাচাজ মশাই এই মেয়ের বিয়ে দেব কি করে, এত্ত কালো মেয়ে হল! " হেসে বলেছিলেন পশুপতি " একুশদিন যাক দেখব এই কৃষ্ণবর্ণা দ্রৌপদীর কটা বর আছে? " একবছরের মাথায় প্রথম ছকটা করেছিলেন, তখনই তার ভ্রুকুঁচকে ছিল। পাঁচবছর নাহলে কুষ্টি ঠিকুজী তিনি করেন না । ঠিক পাঁঁচবছরের জন্মদিনেই জেনেছিলেন, কন্যা পতিঘাতিনী হবে আর তার অল্প বয়সে মৃত্যু ফাঁড়া আছে । বলেননি তখনই কাউকে, শুধু ভেবে যাচ্ছিলেন এর কি কোন প্রতিকার করা যায় না!! যোগাযোগ করেছিলেন নিজের গুরুদেবের ছেলে মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে। বিচারে সেই একই ফল । অনেক পরে জানিয়েছিলেন অপরাজিতার বাড়িতে । ভেঙে পড়েছিল অপরাজিতার বাবা মা। শান্তি পাচ্ছিলেন না পশুপতিও, শেষে অপরাজিতার বাবা মা ভেবেছিলেন বিয়েই দেবেন না মেয়ের কিন্তু যেমন সুন্দর দেখতে তেমন দারুণ চেহারা, হুল্লোড়ে মেয়ের প্রচুর বন্ধুবান্ধব চাহানেবালা, বিপথগামী হবার চান্স ভিষণ, মেয়েও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বদলাচ্ছে, এমনিতেই খুব চড়া তারে বাঁধা তার শরীর মন । বিয়ের সম্বন্ধ আসতেই লাগল । এই সময় মৃত্যুঞ্জয় একটা ছেলের খবর আনল, ছেলে পালটি ঘর, চেহারা সুন্দর, খুব চড়া ফর্সা, শিক্ষিত, মুখশ্রী ভালো নয় তা ছেলেদের চেহারাই আসল, মুখশ্রী নিয়ে কি হবে। ছেলের দাদু ঠিকুজী নিয়ে এসেছিলেন বিচারের জন্য, আঠাশে নাকি একটা বিশাল ফাঁড়া আছে! বিচারে বসে মৃত্যুঞ্জয় দেখল ছেলের সত্যি ফাঁড়া আছে কিন্তু আরো যেটা আছে সেটা হল পত্নিবিয়োগ যোগ । এই ছেলের বিয়ে দিলে বৌ মারা যাবেই। মাথায় একটা বুদ্ধি ভর করল মৃত্যুঞ্জয়ের, যদি অপরাজিতার সাথে বিয়ে দেওয়া যায় তবে দুই যোগে কাটান হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে, বৌ যদি আগে মরে তবে স্বামীকে হত্যা করবে কি করে? সবচেয়ে ভালো ছিল বিয়েই না দেওয়া কিন্তু মেয়ে ক্রমশ একটি অতি খারাপ মডেল ছেলের পাল্লায় পরে সেদিকে খুব ঝুঁকেছে। এখানে ফাঁসলে ভাগ্যে না থাকলেও খুনোখুনি হবেই।। মেয়ের যা চড়া মেজাজ। কিন্তু এই সম্বন্ধে অত কালো মেয়ে আর ছেলে কাঁচা হলুদ গায়ের রঙ, পছন্দ হবে?
দারুণ পছন্দ হল দুজনের দুজনকে, বিয়ে হয়ে গেল ধুমধাম করে । ছেলের মা আর দাদু দেশে থাকতেন, বাবা নেই, এখানে দুজনের একলার সংসার ওদের দেখে মনে হয়েছিল সার্থক জুটি, খুব সুখের সংসার হবে। সত্যি পাগলের মত ভালোবাসা ছিল দুজনের মধ্যে, কিন্তু ভালোবাসা থেকে অধিকারবোধ, সেই থেকে সন্দেহ । অপরাজিতা অর্ককে তার ছাত্রীদের নিয়ে সন্দেহ করত, অর্ক জনপ্রিয় প্রফেসর ছিল, সুন্দরী হলেও অপরাজিতার রঙ নিয়ে একটা কমপ্লেক্স ছিল । শুরু হল নিত্য অশান্তি, ঝগড়া, জিনিস ছোঁড়াছুঁড়ি, অথচ কেউ কারোকে ছেড়ে দেবে না। বিয়ের আটমাসের মাথায় একদিন অর্কের সেমিনারে যাওয়ার কথা , অপরাজিতা কিছুতেই যেতে দেবে না, তার নিশ্চিত ধারণা অর্ক তার ছাত্রী বিদিশার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে, ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে চাবি দিয়ে দিল অপরাজিতা । অর্কর সাথে চাবি নিয়ে কাড়াকাড়ি করার সময় রাগ সামলাতে না পেরে অর্ক চড় মারল অপরাজিতাকে। অপরাজিতা কিছুক্ষণ স্তব্দ হয় দাঁড়িয়ে থেকে ছুটে গেল স্টোররুমে তার একটা কেরাসিনের ক্যানের তেল গায়ে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিল, তারপর দুহাত মেলে ছুটে গিয়ে অর্ককে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। শেষে ওরা নিজেরাই দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছিল বোধহয় কষ্টে। ভয়ানক কান্ড, লোকজন ছোটাছুটি, হসপিটাল.... অপরাজিতা পরদিন ভোরে মারা গেল আর অর্ক সাতদিন মৃত্যুর সংগে লড়াই করে হার মানল। সেই বৌএর হাতেই খুন হল অর্ক, আর তার বৌ তার আগেই মারা গেল!! অনেক চেষ্টা করেছিল পশুপতি ফাঁকি দিতে ভবিতব্যকে কিন্তু তার সব চালাকিকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল দুটি জীবন।।

(গল্পটির উদ্দেশ্য কোন কুসংসারকে প্রশ্রয় দান নয়, এটি কিঞ্চিত সত্যাশ্রিত একটি নিছক গল্প )


সমাপ্ত

© FB.com/ratna.chakraborty.796



Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn Pinterest StumbleUpon Email



~~ জলছবি ~~