Ichchepur - A bengali story

Jolchobi

ইচ্ছেপুর

ঋতুপর্ণা রুদ্র

খাটে শুয়ে শুয়ে মাকড়শার জাল বোনা দেখছে তানিয়া, পরিষ্কার দেয়াল তবুও কোণে ঠিক জায়গা পেয়েছে ওরা।
আসলে আগে খুব ঝকঝক করতো ওর বাড়ি, আজকাল যেন সবেতেই আলস্য, কিছুই করতে ইচ্ছে করে না। কিছুদিন আগেও সব অন্য রকম ছিল। সুশ্রী মধ্যমবর্ণা তানিয়াকে দেখে মনে হত মুখে আলো জ্বলছে, সবসময় পরিপাটী সাজ, নিয়মিত পার্লার গমন, ত্বকের যত্ন, সকালে এক ঘন্টা যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম, বিকেলে আধ ঘন্টা হাঁটা, ডায়েট মেনে খাওয়া।

বিয়াল্লিশের তানিয়াকে দেখে দশ বছর কম লাগতো। খুব হাসিখুশিও ছিল, ঘরে সাজানো সংসার, উচ্চ পদস্থ বর আর সতেরো বছরের ছেলে।দুজনেই তানিয়া বলতে অজ্ঞান।

নিউ আলিপুরের দেড় হাজার স্কোয়ার ফুটের দক্ষিণ খোলা ফ্ল্যাট, বহুমূল্য আসবাবে আর তানিয়ার যত্নে ঝকমক করতো কিন্তু গত প্রায় এক বছর ধরে অদ্ভুত একঘেয়েমি ধরেছে ওর, কোনো কিছুই যেন ভাল লাগে না। প্রতিটা দিন আর একটা দিনের মত, জীবনে কোনো রোমাঞ্চ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তখন একটা সিরিয়াল দেখতো ও টিভিতে, একদিন ভাবলো, সিরিয়ালের নায়িকার কি মজার একটা ননদ যে সবসময় বৌদির ক্ষতি চায় শুধু, আর ঠিক মুহুর্তে তার সব চাল ভেস্তে যায়, তার যদি এরকম একটা ননদ থাকতো বেশ জমতো জীবন টা কিন্তু সুরজিৎ এক ছেলে তাই সেটা হবার নয়। শাশুড়ি মারা গেছেন বছর পাঁচেক আগে, মানুষটাও ছিলেন খুবই নির্বিরোধী ,পুজো আচ্চা নিয়েই থাকতেন।

(দুই)

দুচার জন স্কুল কলেজের বান্ধবীদের সাথে হাল্কা যোগাযোগ আছে, একদিন সবাইকে বাড়িতে খেতে ডাকলো। দুপুরটা বেশ কাটলো কিন্তু রোজ তো কেউ আসবে না সবাই নিজের জীবনে ব্যস্ত।
দুপুরের গল্পে তানিয়া দেখলো সবাই বরের নিন্দায় ব্যস্ত, কেউ বৌকে সময়ই দেয় না, কেউ আবার বৌয়ের হাতে পয়সা দেয়না, কাউকে আবার প্রতিটা পদক্ষেপ বর বা শাশুড়ির অনুমতি নিয়ে ফেলতে হয়।
তানিয়া কিছুই বলতে পারলো না। সুরজিত টাকা পয়সা সবই তানিয়ার হাতে তুলে দেয়, কখনো কিছুই বলে না, তানিয়া যদি কোথাও যেতে চায় সঙ্গে করে নিয়ে যায়, একা গেলেও আপত্তি কিছু করবে না।
সেদিন হঠাৎ খুব রাগ হল সুরজিতের ওপর এত ভাল হবার দরকার ছিল কি! বন্ধুদের কাছে ও কিছুই বলতে পারলো না।

দু চার দিন পরে মনে হল ওর বরের কোনো বান্ধবী নেই তো? আজকাল তো এসব খুব চলছে, তাই হয়তো এত ভাল সেজে থাকে।
উৎসাহে পড়ে তানিয়ার সন্দেহ দৃঢ় হয়, হোক হোক তাই হোক, খুব কাঁদবে ও বেশ ঝগড়া ঝাটি হবে তারপর সেই মেয়েটার বাড়িও যাবে ও, মনে মনে জমে ক্ষীর হয়ে যায়, কিন্তু টানা দুমাস বরের ফোন তন্ন তন্ন করে ঘেঁটে আর সব খোঁজ খবর নিয়েও কিছু পেল না ও।
দূর ছাতা বাবা তার বিয়ে দিয়েছিল বটে একটা ভাল মানুষ লোকের সাথে, বাবার ওপরই সব রাগ গিয়ে পড়ে তানিয়ার। বাবা নিয়মিত ফোন করে তাকে, তানিয়ার বাপের বাড়ি জলপাইগুড়িতে, তারপর থেকে বাবার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিল তানিয়া কিন্তু বাবাকে তো আর বলা যায় না! বাবা এত ভাল জামাই বাছলে কেন আমাকে একটুও কষ্ট দেয় না, তাই মনের দুঃখ আর রাগ মনেই রেখে দেয়।

(তিন)

আরেকটা সমস্যা যেটা হতে পারতো সেটা ছেলেকে নিয়ে....
বন্ধুদের কাছে শোনে ও, চারপাশে দেখেও কোনো ছেলে বা মেয়ে কথা শোনে না কেউ আবার লেখাপড়ায় অমনোযোগী, কেউ আবার এই বয়েসেই গার্ল বা বয় ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরছে।
তানিয়ার কপাল দোষে ওর ছেলেটা ঠিক তার বাবারই মত। লেখাপড়ায় মেধাবী, খেলাধুলোতেও ভাল। সবচেয়ে বড় কথা নিতান্ত বাধ্য বিনয়ী সুন্দর স্বভাবের।
না ভগবান সব দিক থেকেই তাকে মেরেছেন।

সেদিন বিকেলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তানিয়া শুনলো কি সুন্দর ঝগড়া হচ্ছে সামনের ব্লকের মিসেস ঘোষের সাথে তার কাজের মেয়ের, এতদুরেও পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে, একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে তানিয়ার। পিয়া অর্থাৎ তার কাজের লোক শাশুড়ির আমল থেকে কাজ করছে যেমন বিশ্বাসী তেমন ভাল কাজ, ঝগড়ার প্রশ্নই ওঠে না, না ভগবান সত্যি একচোখো।

(চার)

তারপর থেকেই আস্তে আস্তে এই অবসাদের শুরু।
কোনো কাজে আর উদ্যম পায় না, বাড়ি ঘরে অলক্ষ্যে জমে ওঠে ধুলো মাকড়শার জাল।
সাজ গোজ করা, ব্যায়াম সবই ছেড়ে দিয়েছে আজকাল, মনে হয় কি হবে এত কিছু করে, চুলে দু একটা রূপোলী রেখা, সেরকমই রেখে দিয়েছে ও।
প্রথম দিকে বুঝতে না পারলেও পরে ব্যাপারটা নজরে পড়লো সুরজিতের, কিন্তু তানিয়াকে অবহেলা করা তার ধাতে নেই ।
ভাবল সময় দেওয়া বাড়াতে হবে, পরপর কদিন ডিনারে নিয়ে গেল, সিনেমা, কেনাকাটা। দিন দশেক বাইরেও ঘুরে এল তারা। তার বদলে যদি অবহেলা বা চেঁচামেচি করত তানিয়া কান্নাকাটি করে মন ভাল করে নিতে পারত।
শুয়ে শুয়ে তানিয়া ভাবে আজ সুরজিত এসে বেশ রাগ করবে বলবে কি দিইনি তোমায়, তাও সংসারের প্রতি এত অবহেলা কিসের, এটা রান্না হয়েছে? ঘরে এত ধুলো কেন? আজ একটা হেস্ত নেস্ত করবো!
কিন্তু না।
তানিয়ার স্বপ্ন মনেই থেকে যায়, সুরজিত এসে তাকে বলে তোমার শরীরটা খারাপ হচ্ছে ,অনেক চাপ আমি বুঝি, একটা রান্নার লোক রাখো এবার।
নিজেই পিয়াকে বলে রান্নার লোকের কথা, আর ছুটির দিনে সকালে উঠে নিজেই ঘরবাড়ি পরিষ্কারে মেতে ওঠে। তানিয়া কপাল চাপড়ায় একান্তে। না তানিয়ার দুঃখ বোঝার কেউ নেই।
সবাই চলে গেলে আজকাল ফাঁকা বাড়িতে তানিয়ার দম আটকে আসে, আরো কতদিন বাঁচতে হবে তাকে এই ঘেরাটোপের মধ্যে।
অসম্ভব কল্পনা করতে থাকে কখনো কখনো !
একদিন ভাবে ময়লা কাপড় পড়ে রাস্তায় গিয়ে ভিক্ষে করলে কেমন হয়,! কখনো মনে হয় জমিয়ে একটা প্রেম করলে বোধহয় ভাল লাগবে। দু চার জন এরকম লোক তো থাকেই, যারা চেনাশোনার মধ্যেই কিন্তু তানিয়াকে দেখে গদগদ হয়ে ওঠে অনেকে ওকে মেসেজও করেছে।
কিন্তু কি জানি কেন তাতেও তানিয়া উৎসাহ পায় না। সেদিন ফাঁকা ঘরে শুয়ে সিলিং ফ্যানটা টানতে থাকে ওকে ভাবে গলায় একটা ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়বে কি না। পিয়া এসে যেতে ভাবনাটা কার্যে পরিণত হয় না।

(পাঁচ)

বছর খানেক অতিক্রান্ত ;তানিয়ার মনটা আর ভালই হয়নি। ওকে নিয়ে সুরজিত ডাক্তারের কাছেও ঘুরে এসেছে, কদিন ওষুধও খেল, কিন্তু তীব্র অন্তর্লীণ বিষাদ ওকে ছাড়ে না। মাঝে ওর মা এসে থেকে গেলেন।

কদিন কেউ বুঝতেই পারে না ওর সমস্যাটা কি ! তবে আজকাল তানিয়া ওর বিষাদটা লুকিয়ে রাখে, সংসারের কাজ অনিচ্ছা সত্ত্বেও করে রাখে, সবার সামনে হাসিমুখে একটা অভিনয় করে কিন্তু মনের মধ্যে কি চলে সেটা ওই জানে।

আজ ও একা, ছেলে কলেজ হোস্টেলে আর সুরজিত সকাল সকাল অফিস গেছে।
মনটা যেন ডাকছে ,আজ তানিয়াকে আজ বেরোতেই হবে। একটা পুরোনো শাড়ী পরে সামান্য টাকা পয়সা নিয়ে নেয় ব্যাগে।
মোবাইলটা বাড়িতেই থাকুক, গয়নাও সবখুলে রাখে, শুধু হাতে নোয়া আর আংটিটা খোলেনা।
বেরিয়ে পড়ে ও, নিচের সিকিউরিটির কাছে চাবিটা রেখে বলে পিয়া এলে দিতে। কোনদিকে যাবে জানেনা ও, গাড়ি ছাড়া বেরোনোর অভ্যেসও নেই, হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে এসে প্রথম বাসটাতে উঠে বসলো।
বাসটা বোধহয় ধর্মতলা অবধি যায়, সেরকম টিকিট কাটলো ও। ধর্মতলায় নেমে কোথায় যাবে ভাবতে ভাবতে সামনেই দেখল অনেক বাস ছাড়ছে, ডাকাডাকি করছে রাণীপুর, ইচ্ছেপুর, মাদারিতলা।
কি মনে হতে উঠে পড়ে, জানলার ধারে সিটও রয়েছে। একটু পরেই বাসটা ছাড়ল।

কলকাতা ছাড়ার কিছুটা পরেই কি সুন্দর ফাঁকা রাস্তা, দুপাশে গাছপালা, বাসের হাওয়ায় মনটা খুব ভাল লাগে তানিয়ার, অনেকদিন পরে......
পাশের সিটে একজন ভদ্রমহিলা, বেশ বয়স্ক ষাট পেরিয়েছেন মনে হয়। তানিয়া তাকালে উনি মিষ্টি করে হাসেন।
ভারি চমৎকার চেহারা, মা মা ভাব, তানিয়ার ঠাকুমা অনেকটা এরকম দেখতে ছিলেন।

কোথায় যাবে মা ইচ্ছেপুর তো? কি বলবে ভেবে না পেয়ে তানিয়া মাথা নাড়ায়। উনি হাসিমুখে বলেন তুমি তো চেনোনা, আমার সাথে নেমো। চমক লাগে তানিয়ার উনি জানলেন কি করে, কিন্তু মুখে কিছু বলা হয় না। বসে বসে অনেক গল্প করেন উনি।

বলেন আমাকে সবাই সোনামা বলে তুমিও তাই বোলো। ঘন্টা তিনেক পরে সোনামা ডাকেন তাকে, বলেন এবার নামতে হবে।
বাধ্য মেয়ের মত ওনার পেছনে বাস থেকে নামে সে। জায়গাটা সাধারণ গ্রাম্য, বাস স্ট্যান্ডে একটা চায়ের দোকান, একটা মুদিখানা, পাশ দিয়ে মাটির রাস্তা। সেই পথে এগিয়ে যান সোনামা পিছনে তানিয়া।
কেমন ভয় করে তার, কি জানি উনি তো তাকে কিছু জানতে চাইলেন না, কোথায় চলেছে সে, আবার ভাবে জানা পথে তো অনেক হল, দেখা যাক কি আছে.......

একটু এগিয়ে দু একট ভ্যান রিক্সা দাঁড়িয়ে। তারই একটাতে বসা হোল। রিক্সাচালকও অমনি চলতে শুরু করল, তানিয়া খেয়াল করল সে জানতে চাইলো না কোথায় যেতে হবে।
চলেছে তো চলেছে, আধ ঘন্টা পরে সোনামা বললেন আমি এখানে নেমে যাব, তোমায় আর একটু যেতে হবে, চিন্তা করনা সব ব্যবস্থা করা আছে।

রিক্সা একটু দাঁড়াতে উনি নেমে ডানহাতি একট্য পথে চলে গেলেন,তানিয়ার এবার সত্যি সত্যি গা ছমছম করছে, কোথায় চলেছে সে, উনিই বা কোথায় চলে গেলেন।

(ছয়)

একটু বাদেই উত্তর মিলল। অনেকখানি জায়গা জুড়ে বেশ বড় একটা আশ্রম মত, ফুলের বাগান, গাছপালা, বেড়া আর গাছ দিয়ে ঘেরা সেখানে গিয়ে ভ্যানগাড়িটা দাঁড়ালো।
একটা বোর্ডে লেখা আছে ইচ্ছেপুর আবাসিক আশ্রম।
ভ্যান থেকে নেমে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে তানিয়া জানতে চায় কত দিতে হবে ?
কিছুই না বলে ভ্যানওলা গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল।
বেড়ার গেটটা ঠেলে পায়ে পায়ে ভিতরে আসে তানিয়া। সামনের ঘরটার দরজা খোলা, অফিস মত, ভেতরে টেবিল চেয়ার কম্পিউটার, একটা বড় বেঞ্চি, একটা অল্পবয়সী মেয়ে কিছু কাজ করছে।
তানিয়াকে দেখে হাসিমুখ তোলে। -"আপনি এসে গেছেন? অসুবিধা হয়নি তো? আসুন আসুন।
সুমতিদি একটা চা দাও না, চা খেয়ে তারপর ভেতরে যাবেন।"

-"আপনি জানতেন আমার আসার কথা?"

ঘাড় নাড়ে মেয়েটি
-"সোনামা কাল জানিয়েছিলেন, আপনার নাম কি দিদি?"
চা এসে গেছে, সাথে বিস্কুট। দুধ ছাড়া লাল চা আর বিস্কুট খেতে খুব ভাল লাগে তানিয়ার। নাম বলে চারপাশ দেখতে থাকে সে। অফিসঘরের পিছনে আরো একটি দরজা আছে, ওপাশে একটা বড় বাড়ি, সামনে টানা বারান্দা, টালির চাল।

(সাত)

মেয়েটি তাকে নিয়ে চারপাশ দেখাল, ওর নাম ইতি।
এই আশ্রমে প্রায় তেত্রিশ জন মেয়েরা থাকে বিভিন্ন বয়েসের। সর্বকনিষ্ঠটির বয়স পনেরো। এরা প্রায় সবাই পাচার হয়ে গেছিল কেউ বিয়ের পর, কাউকে আবার সোজাসুজি কেনা হয়েছিল, উদ্ধার হবার পরে বাড়িতে এদের ঠাঁই হয়নি, এখন এরা এখানেই থাকে।
ইতি অবশ্য পাচার হয়নি, ওর স্বামী মারা যায়, বাপের বাড়ি শ্বশুরবাড়ি কোথাও জায়গা ছিল না। এখন ও এই আশ্রমের ইনচার্জ।

(আট)

আশ্রমটা ঘুরে দেখে স্নান সেরে নেয় তানিয়া। কুয়ো থেকে জল তুলে পাশে একটা ঘেরা জায়গায় স্নান, সঙ্গে জামা কাপড়ও নেই, ইতির একটা শাড়ি পরে নিল।
এখানে সবাই কাজ করে, সিল্কের শাড়িতে আঁকার কাজ, সেলাই কল চালিয়ে জামা কাপড় বানানো, তিন চার জন রান্না ঘরে।
ওদের পড়া শোনা হয় সন্ধ্যে বেলায়, ইতি পড়ায়, আরো একজন দিদিমণি আসে।
রবিবার গান শেখানো আর কম্পিউটার শেখানো হয়। দুপুরে খাওয়া সবার সাথে মাটিতে বসে। ভাত ডাল, কুমড়ো সেদ্ধ, আর চাটনি।
ছোট মেয়েটি বলে
-"আপনি আসবেন বলে আজ চাটনি হয়েছে।"
খেতে খুব ভাল লাগে তানিয়ার, এরকম ভাবে মাখা কুমড়ো সে আগে খায়নি। ওরা বাগানে ফলিয়েছে এই কুমড়ো।
ইতিকে সোনামার কথা জিজ্ঞেস করতে ইতি একটু গম্ভীর হয়ে যায়,
-"এই জমি আশ্রম সবই ওনার, তবে উনি রোজ আসেন না, মাঝে মাঝে আসেন, আশ্রমের নিজস্ব একটি মোবাইল ফোন আছে, তাতে ফোন করে নির্দেশ দেন। কখনো নতুন কোনো মেয়েকে নিয়ে আসেন। কখোনো আপনার মত কেউ কেউ আসার খবর জানান। আপনি ওনাকে কতদিন চেনেন দিদি?"
-"অনেকদিন ইতি, অনেকদিন ধরে এখানে আসতে চাইছিলাম কিন্তু ঠিকানা পাচ্ছিলাম না, কাল পেলাম"। হাসে তানিয়া
-"সোনামা বলেছে আপনি আগামীকাল চলে যাবেন, কিন্তু আবার আসবেন তো দিদি?"
-"হ্যাঁ কাল চলে যাব, কিন্তু আবার আসব ইতি, হয়তো প্রতি সপ্তাহে, এখানে আমার অনেক কাজ আছে তো, তাই আসতেই হবে"।

(নয়)

বিকেলে তানিয়া ওদের সবাইকে গান শোনাল, গল্প শোনালো, খুব হাসিখুশি এই মেয়েরা, যদিও প্রায় সবার অতীত বেশ ভয়াবহ।
পরদিন চা খেয়ে তৈরি হয়ে বেরোল তানিয়া, গতকালের ভ্যানওলা এসে দাঁড়িয়ে আছে ওকে বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যাবে বলে, বেরোনোর আগে নিজের সাথে যা টাকা ছিল সামান্য রেখে ইতির হাতে দিয়ে দিল তানিয়া, আশ্রমের ফান্ডে।
কলকাতা আসতে আসতে মনটা কি যে ভাল লাগে তানিয়ার, সেই সঙ্গে ভাবতেও থাকে সোনামার কথা।
কি করে জানলেন উনি তার আসার কথা, সে নিজেও তো জানতো না!
ভাবতে ভাবতে মনে হয় কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর না জানাই থাক বরং। এখানে আবার আসবে সে, সুরজিতকে সব বলতে হবে।
খুব চিন্তা করছে নিশ্চয়। গিয়ে ও সব বুঝিয়ে বলবে। বাড়ি ফিরে নিজের হাতে রান্না করবে আজ ;ভাত ডাল কুমড়ো সিদ্ধ।

সমাপ্ত

© FB.com/rituparna.rudra.9



Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn Pinterest StumbleUpon Email



~~ জলছবি ~~