Orthonoitik Swadhinota - A bengali story

Jolchobi

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা

পারমিতা চ্যাটার্জী

মিত্রা আজই ফিরল মেয়ের বাড়ি থেকে-- এসে নিজেই একটু চা করল --- স্বামী প্রতীককেও দিল- নিজের জন্যেও নিল--। বেশ ক্লান্ত হয়ে পরেছে সে এতটা জার্নি করে এসে-- ক্লান্ত হাতে চায়ের কাপটা নিয়ে একটু বসল-- খাবার টেবিলে -- সে জানে এরপর সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেতে হবে তাকে-- তা সে যতই ক্লান্ত হোক না কেন--।
মিত্রার অর্থনৈতিক জোর নেই -- যদিও মেয়েদের কৃপায় এখন সে অনেকটাই স্বাবলম্বী -- তবুও সংসার খরচের টাকা তো এর কাছ থেকেই হাত পেতে নিতেও হয় আবার গুণে গুণে তার হিসেব ও দিতে হয়--। সেই হিসেবে ওরই জোর টা মেনে নিতে হয়-।
কিছুক্ষণ বসার পর প্রশ্ন আসতে শুরু করল-- ওখানকার খবর সব ঠিক আছে তো?
- হ্যাঁ সব ঠিক আছে --
-- তুমি নিশ্চয়ই খুব ভালো ছিলে?
- হ্যাঁ তা ছিলাম -
- হু এদিকে আমাকে যে কত সমস্যার মধ্যে কাটাতে হয়- তার খবর আর কে রাখে?
- কেন তুমিও তো বেড়িয়ে এলে ব্যাংকক থেকে-
- ওই শুধু একটু চার দিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছিলাম ওতেই জ্বলে যাচ্ছ না? - কি আশ্চর্য! আসতে না আসতে ঝগড়া শুরু করে দিলে--? আমার শরীর খুব খারাপ - আর এভাবে আমার সাথে ঝগড়া কর না--
- সুখের বিছানায় শুয়ে শুয়ে যদি কারও শরীর খারাপ হয় তবে আর কি করা যাবে-- নিজেকে নিয়েই ব্যাস্ত চিরকাল -- কোনদিন যদি আমার মনটাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করতে তা হলে এত সমস্যা থাকতোনা --
- তুমি কি কোনদিন আমাকে বোঝার চেষ্টা করেছ--?
- তোমাকে আবার বোঝার কি আছে? মেয়েদেরই উচিৎ তার স্বামীর মনটাকে জয় করে নেওয়া- সে চেষ্টা তুমি কোনদিন কর নি--
-- সব উচিৎ মেয়েদেরই না?
- হ্যাঁ তা তো বটেই -- আমরা রোজগারও করব খাওয়া পরার জোগানও দেব, আবার তোমাদের নিয়ে ভাবব-- এত সময় কোথায়?
- সেই তোমাদের ওই একটাই জোর অর্থনৈতিক -- যা দিয়ে তোমরা আমাদের মাথাটা কিনে নিয়েছ-- খাইতো দুটো ভাত দুবেলা - বিনিময়ে যে সার্ভিস টা দি তার কোন মূল্য তো তোমাদের কাছে নেই -- তোমাদের ওই একটাই উত্তর - মেয়েদের এটাই করতে হয়-- এটাই নিয়ম-- তাদের আবার আলাদা কোন মনের অস্তিত্ব থাকতে পারে না কি? সব কিছু তোমাদেরই আছে-- একমাত্র কাজ আমাদের স্বামীর তালে তাল মিলিয়ে চলা--
-- হ্যাঁ সেটাই একমাত্র কাজ তোমার -- যা তুমি কোনদিন কর নি--।
- ঠিক আছে মেনে নিলাম সব-- সত্যি আমার অন্যায় তোমার খাই পরি অথচ তোমার তালে তাল দিয়ে চলি না-- খুবই অন্যায়-- কিন্তু একটা কথা বলবে আমায় -- আর কি ভাবে ঠিক চললে তোমার তালে মিলিয়ে চলা হয়--
- খালি তর্ক করতেই শিখেছ-- বললাম একটা সমস্যা আছে-- তা নিয়ে কোনো তাপ উত্তাপ নেই --
-- বল শুনছি - কি সমস্যা?
- থাক আর শুনতে হবেনা - আমায় খাবার দাও আর নিজে খেয়ে দয়া করে শুয়ে পর--।
- হ্যাঁ সেটাই ভালো- কাল সকালে বরং ঠান্ডা মাথায় বোল তোমার সব সমস্যার কথা---। মিত্রা সমস্ত দিনের ক্লান্তি মুছে স্বামীর খাওয়ার দিল সাজিয়ে আর নিজের জন্য সমান্য একটু ভাত আর আলুসিদ্ধ নিল--।
ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন প্রতীকের -- মাছ নিলেনা--?
-- না
-- কেন?
-- ভালো লাগছেনা--
- ও তা এই আলু সেদ্ধ ভাত খেয়ে তুমি কি প্রমাণ করতে চাইছ? কত কষ্টে থাকো তুমি? -- আমি কিছুই প্রমাণ করতে চাইছি না, শুধু খুব ক্লান্ত বলে আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছেনা --।
খাওয়ার পালা মিটে গেলে যে যার ঘরের দিকে চলে গেল--। একটু পরে প্রতীকের নাক ডাকার শব্দ কানে আসতে লাগলো--। মিত্রার চোখে ঘুম আসছেনা --।
আর কতদিন - আর কতদিন? এই পরাধীনতার গ্লানি সহ্য করে তাকে বেঁচে থাকতে হবে--? শুধুমাত্র তার আজ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নেই বলেই এত অপমান তাকে শুনে যেতে হয়-- তার স্বামীর জোর হচ্ছে তার অর্থের -- যেহেতু সংসারটা তার পয়সায় চলে-- তাই সংসারের সব কিছু সিদ্ধান্ত তার -- মিত্রাকে তা মেনে চলতেই হবে--। সমাজ বদলেছে কারণ মেয়েরা এখন প্রায় প্রত্যেকেই অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন -- তাদের সময় মেয়েদের এভাবে অনেককেই মরে বেঁচে থাকতে হয়েছে -- প্রতিদিন কত মেয়ে একটু একটু করে নিজেদের মেরে ফেলেছে -- ক জন আর তার খবর রাখে? এটাই ছিল জীবন অধিকাংশ ক্ষেত্রে তবে ব্যাতিক্রম তো আছেই -- আছে বলেই ভালো মন্দ মিশিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি --।।

সমাপ্ত

© FB.com/paromita.chatterjee2



Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn Pinterest StumbleUpon Email



~~ জলছবি ~~