Prodhanmontri - A bengali story

Jolchobi

প্রধানমন্ত্রী

নালন্দা চক্রবর্তী

(সাল ২০৭৫) জায়গাটার নাম জঙ্গলপাড়া। প্রায় তিনশো বিঘা জমি। জমি ঠিক নয় জঙ্গলে ঘেরা একটা অপরিচ্ছন্ন জায়গা বলাই ভালো।কোথাও ডোবা,কোথাও পাথর আর জঙ্গলা গাছে আর সাপখোপে ভরা বিস্তির্ণ অঞ্চল। দু-একটা মার্ডার হওয়া ডেডবডিও এখানে পাওয়া গেছে। এত বড় জমিটার সংষ্কার করা বিশাল খরচের ব্যাপার। তাই সরকার এতদিন এদিকে ফিরেও তাকায় নি। কিন্তু আজ নিজের বিশাল বাহিনী এবং সিকিওরিটি গার্ডদের নিয়ে এই জঙ্গলের সামনে এগিয়ে এলেন ভারতের প্রথম বাঙ্গালী প্রধানমন্ত্রী বছর পঁয়ষট্টির রতিকান্ত ভট্টাচার্য।মাথাভর্তি সাদা চুলের মানুষটির পরনে ধুতি পাঞ্জাবি এবং গায়ে সাল। জঙ্গলের সামনে এসে সেক্রেটারি মনোজ তিওয়ারিকে ডেকে বললেন,"মেরা ল্যাপটপ লে আনা"...টেবিল চেয়ার পেতে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লেন রতিকান্তবাবু। মেশিন দুটোকে ল্যাপটপের সাথে ফিট করলেন। আধ ঘন্টা সময় নিলেন রতিকান্তবাবু। ল্যাপটপের স্ক্রিনে পুরো জঙ্গলটার ছবি ভেসে উঠলো। বেশ জোরে এন্টার বটন প্রেস করলেন রতিকান্তবাবু। বিশাল শব্দে জঙ্গল কেঁপে উঠল। জঙ্গলে যেন ঘুর্নিঝড় হচ্ছে। তবে রতিকান্তবাবু এবং তার সঙ্গীসাথিদের কিছুই হচ্ছে না। যা হচ্ছে তা সব জঙ্গলের ভিতরেই হচ্ছে। জঙ্গলের সমস্ত জঙ্গলা গাছপালা শূন্যে ঘুড়পাক খেতে লাগলো। একটু বাদে ঝড় থেমে গেল। সেই জলাজঙ্গল যেন ধূসর মরূভূমিতে পরিনত হয়েছে।খালি এক জায়গায় পাহাড়ের মত স্তুপিকৃত অবস্থায় পরে রয়েছে জঙ্গলের সমস্ত আবর্জনা। এবার দ্বিতীয় প্রোগ্রাম চালু করলেন রতিকান্তবাবু। কিছু টাইপ করেই এন্টার প্রেস করলেন।আবার ঝড় শুরু হল।বিশাল ঝড়।তারপর আস্তে আস্তে থেমে গেল।একি!!! এই জমির মাঝে অবস্থান করছে বৃহদাকৃতির এক অট্টালিকা। স্তুপিকৃত উপাদান থেকেই সৃষ্টি হয়েছে এই স্বপ্নের বাড়ি।বিশাল বড় এবং বিস্তির্ণ,প্রচুর ঘর,বিদ্যুতের ব্যবস্থাও আছে। এই বিদ্যুৎ শক্তির উৎপাদক হল বজ্রবিদ্যুত...তৈরি হল স্বপ্নের বাড়ি। মাথা পিছন দিকে ঘুড়িয়ে রতিকান্তবাবু সেক্রেটারিদের বললেন,"ওদের ছেড়ে দাও"...। লোক বোঝাই মোট চল্লিশটা গাড়ি ছিল যাদের সবকটা দরজা খুলে দেওয়া হল।ছুটে আসছে ওরা, সেই গৃহহীন পথবাসি মানুষেরা।যাদের হাত পা ঠিক আছে তারা ছুটে আসছে আর যারা বিকলাঙ্গ তাদের ধরে ধরে নিয়ে আসা হচ্ছে। আজ ওরা ঘর পেয়েছে। ঘর তো নয় এ তো অট্টালিকা। আর ওরা বৃষ্টিতে ভিজবে না,আর খিদেয় কষ্ট পাবে না। কিন্তু ওদের গা গুলো সবুজ সবুজ কেন??...রতিকান্তবাবু যে ওদের গায়ে ক্লোরোফিল ইনজেক্ট করে দিয়েছেন।নাহ আর ওদের খিদেয় কষ্ট পেতে হবে না,আর ভিক্ষে করতে হবে না। কারণ ওরা যে এখন সূর্যালোক থেকে খাবার তৈরি করে নেবে।ওরাই এখন কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে অক্সিজেন ছাড়বে। পরিবেশে গাছের মত কাজ করবে এই ভিখিরি এবং বিকলাঙ্গ অমানুষগুলো। তবে অর্থবান বা উঁচুতলার মানুষদের জন্য এই নিয়ম রাখেননি বিজ্ঞানী প্রধানমন্ত্রী রতিকান্তবাবু। তারা স্বাভাবিক মানুষদের মতই জীবনযাপন করবে,খাবার খাবে।অনেকে রতিকান্তবাবুকে প্রশ্ন করেছিল যে,"সব গরিব মানুষকে যখন ক্লোরোফিল ইনজেক্ট করেই দিলেন তাহলে তো এরা কোনো কাজই করবে না।তাহলে চাকর বাকরের কাজ কাদের দিয়ে হবে??"উত্তরে রতিকান্তবাবু বলেছিলেন,"চাকরের কাজ ক্রিমিনালরা করবে।সেইসব ক্রিমিনাল যারা এতদিন ছোটো শিশুদের হাত পা কেটে তাদের রাস্তায় বসে ভিক্ষা করাচ্ছিল"...আজ তারা সব জেলে।একে একে সমস্ত অপরাধিদের জেলে ভরেছেন রতিকান্তবাবু। এখন জেলের অপরাধির সংখ্যা বেড়ে প্রায় দশগুন হয়ে গেছে। পুলিশের কাজ হল যে এইসব অপরাধিদের রোজ শিকল বেঁধে বাইরে নিয়ে এসে মজুরের কাজ করানো। রতিকান্তবাবু চাইলে প্রোগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত কাজ এক মূহুর্তেই করে দিতে পারেন। কিন্তু অপরাধিদের তো কিছু শাস্তি চাই??তাই এই নিয়ম। আজ দেশের মানুষ খুশি। এখন আর কোনো সিনেমার পরিচালক, "স্ল্যামডগ মিলিনিয়ার"..এর মত মুভি বানান না। দারিদ্র বলে আর কিছু এই দেশে নেই।

আজ থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগের কথা।এই যন্ত্রদুটি আবিষ্কার করার পর আমেরিকার গবেষণাগারে দেখিয়েছিলেন বিজ্ঞানী রতিকান্তবাবু যে কয়েক মূহুর্তের মধ্যে প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে উনি বড় বড় বিল্ডিং তৈরি করে ফেলতে পারেন। কিন্তু আমেরিকা তার এই আবিষ্কারকে ভালো চোখে দেখে নি।ওনারা বলেছিলেন যে এতে মিস্ত্রী এবং মজুর তথা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার শ্রেনীর মানুষেরা প্রবল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।তারা আর চাকরি পাবেন না। তাই এহেন আবিষ্কার আমাদের কোনো লাভের স্বপ্ন দেখাচ্ছে না।
তারপর আমেরিকা থেকে ভারতে ফিরে এসে রাজনীতিতে যোগদান করেছিলেন রতিকান্তবাবু। সাথে সাথে গবেষণাটাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এইভাবেই একদিন আবিষ্কার করলেন সেই ক্লোরোফিল ইঞ্জেকশন যা মানুষ বা যে কোনো প্রানীকে ইনজেক্ট করে দিলে তারা গাছের মত তাদের দেহেই খাদ্য তৈরি করতে সক্ষম হবে। কিন্তু তখন সেইসব আবিষ্কার তিনি জনসমক্ষে আনতে পারেন নি।

বহু কাঠখর পুরিয়ে আজ তিনি প্রধানমন্ত্রী। ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। নিন্দুকেরা হয়ত নিন্দেই করবে কিন্তু কারোর কোনো কথা না শুনে রতিকান্তবাবু নিজের দেশের জন্য কাজ করে যাবেন।

হঠাৎ রতিকান্তবাবুর কাছে একটা খবর এল যে কর্ণাটকে বিশাল বড় বন্যা হচ্ছে। বাড়িঘর সব ডুবে যাচ্ছে,লোকজন মারা যাচ্ছে। খবর পেয়েই ল্যাপটপ খুলে বসলেন রতিকান্তবাবু। তারপর কাজ করতে লাগলেন।। ল্যাপটপ স্ক্রিনে পুরো কর্ণাটকের ম্যাপ ভেসে উঠলো। একটু কিছু কাজ করার পরেই এন্টার বটন প্রেস করলেন রতিকান্তবাবু। হঠাৎ কর্ণাটকের সমস্ত বন্যার জল আকাশে উড়ে গেল। উড়তে উড়তে সোজা সমুদ্রে গিয়ে পড়ল।হাসিমুখে ল্যাপটপ সাট ডাউন করে ফোল্ড করে টেবিলের উপর রেখে দিলেন রতিকান্তবাবু।তারপর ইজি চেয়ারে খোলা জানালার পাশে বসে হাওয়া খেতে লাগলেন। উনি বোধহয় খেয়াল করেননি যে বিরোধি পক্ষের আততায়ী ছাদের পাঁচিল বেয়ে উঠে এসেছে। অবশ্য ওনার চিন্তা করারও দরকার নেই। হাতে তো প্রোটেকশন রিং আছেই। কোনো ব্যক্তি যদি এই আঙটি আঙ্গুলে পরে থাকেন তাহলে তার এক ইঞ্চি দুরত্বের মধ্যে কেউ প্রবেশ করতে পারবে। এই আততায়ীও পারে নি। রতিকান্তবাবুর পিঠে ছুঁড়ি বসাতে গিয়ে হাত আটকে গেল। এমন সময় রোবো বন্ধুর(রোবট) আবির্ভাব। সে ধরে ফেলেছে আততায়ীকে। কাল তার সাজা হবে। মৃত্যুদন্ড না যাবৎজ্জজীবন সেটা ভবিষ্যৎই বলবে।

সমাপ্ত

© FB.com/nalanda.chakraborty



Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn Pinterest StumbleUpon Email



~~ জলছবি ~~