Sesh Bosonto - A bengali story

Jolchobi

শেষ বসন্ত

দেবারতি গোস্বামী

একটা বিশালবড় চাঁদ উঠেছে,দোলপূর্ণিমার মত ,চাঁদের ছায়াটা আড়াআড়ি এসে পড়েছে গাঙ্গুলীদের চন্ডীমন্ডপের বাঁপাশ ঘেঁষে,তুলসীতলায় প্রদীপের রঙ লাল!রোজ সন্ধ্যে আর রাতের মিলনের ঠিক এই সময়টায় তিনতলার ছাদে এসে দাঁড়ায় হৈমন্তী,সামনের গলিটার নাম কেউ দিয়েছিল অনন্তহরি মিত্র লেন,নিয়ন আলোর ছায়ায় রোজ এই সময় দেবব্রত যায় কোথায় যেন,জানেনা হৈমন্তী!তবে হ্যাঁ রোজ হৈমন্তীদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছাদের দিকে একটিবার তাকায় ছেলেটা,দেবব্রত রায় ।"কৃষ্ণকিশোর রায় মহাবিদ্যালয়"এর মেধাবী ছাত্র!আর হৈমন্তী সবে "মালতীলতা বালিকা বিদ্যালয়" সবে ক্লাস নাইন।কিশোরী উন্মাদনা,ওদের বন্ধুমহলে দেবব্রত বেশ জনপ্রিয়,সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি,কাঁধে একটা রাবীন্দ্রিক ঝোলা ব্যাগ,পায়ে চামড়ার বাদামি রঙের চটি,মাথার চুল তেল চিরুনি না পেয়ে উসকোখুসকো অনাথ,গালে খোঁচাখোঁচা দাড়ি দেবব্রতর মধ্যে কি যেন একটা এনে দিয়েছিল!অমোঘ তার টান...উপেক্ষা করা বড় মুস্কিল!

---- "হৈম,ঘরে আয়!রাতে ছাদে কি করছিস?"
মায়ের ডাকে তাড়াতাড়ি নীচের তলায় নেমে চলে হৈমন্তী,নীচে তখন বাবার ঘরে বেতারে খবর বলছে সংবাদদাতা,
"নকশাল আন্দোলনে হত চার যুবক,দুইজনের পরিচয় এখোনো মেলেনি"
কেঁপে ওঠে হৈমন্তী!সালটা এখন 1971..দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই আবার আগুন জ্বলেছে দেশে!সাম্যবাদ না কি সব যেন বলে রেডিওতে,তার ভুল ব্যাখা নাকি করছে ওরা..
পঙগপালের মত মানুষ ঝাঁপ দিচ্ছে আগুনে,নকশাল বাড়ির আগুনের ফুলকি সারাটা বাংলার ছাত্ররাজনীতিতে ছড়াচ্ছে তীব্রভাবে!রোজ নতুন নতুন মৃত্যুর খবর!কে ঠিক কে ভুল হয় নিজেও জানেনা সংবাদদাতা..

----" কি হচ্ছে সারাটা দেশে!ছেলেগুলো পাগল হয়ে গেছে ,যা খুশি করছে,বুঝতে পারছে না এই করে কিছু হয়না!ভাগ্যিস আমাদের এলাকাটা এখোনো ঠিক আছে..."
বাবার কথায় ছুট্টে ঠাম্মার ঘরে গিয়ে ঠাম্মাকে জড়িয়ে ধরে হৈম!কেউ জানেনা ও জানে,পাড়ার দাদারা আর দেবব্রতদা মিটিং করে রোজ বিকেলে ঐ পোড়ো মন্দিরটায়!ওদের কথা থেকে লুকিয়ে শোনা একটা শব্দ মাথাটাকে খানখান করে দেয় হৈমন্তীর "নকশাল"!!!

দেবব্রতর ঘরে রাতে তখন নিয়ন আলো জ্বলে ,ঠাকুরদার বাবা ইংরেজ সরকারের থেকে "রায়বাহাদুর"এর খেতাব পেয়েছিল ,তবে অভিজাতদের নীল রক্ত কখন যে ছাত্ররাজনীতির বামপন্থার লাল রক্তে মিশে গিয়েছিল ও নিজেও জানেনা ,খাতার পর খাতায় তখন বিপ্লব ফুটিয়ে তোলে মধ্যরাতে ,একটা ছবি বারবার চোখের সামনে ,হৈমন্তী!কি আছে মেয়েটার মধ্যে?শুভঙ্করের বোন!কেনই মেয়েটা রোজ ঐ সময় ছাদে দাঁড়ায় আর কেনই বা দেবব্রত রোজ ঐ দিকে তাকায় তা ও নিজেও জানেনা ।

---- "হৈমন্তী দেবব্রতদাকে চিঠি লিখে জানা তোর মনের কথা!"
প্রিয় বান্ধবীর কথায় লজ্জায় মুখ লাল হৈমর শেষ বিকেলের আসরে,
---"যাহ্ ঐ ভাবে বলা যায় নাকি?"

---"তুই চিঠি লেখ হৈম,আমি দিয়ে আসবখন"
শিবরাত্রির ব্রত করে হৈম!সারারাত জেগে দেবব্রতকে লেখা চিঠি নিয়ে ঠাকুরঘরে ,ধুতুরা ফুল ফুটে থাকে দেবব্রতর জানালার পাশে ,হৈম তখন প্রদীপ জ্বালায় মন্দিরে "ঠাকুর দেবব্রতদাকে ভালো রেখো ,ওর যেন কিছু না হয়!আমি ষোলো সোমবার করব দেখো"।
পোড়ো মন্দিরে তখন সভা বসেছে ,যুবক কয়েকজন তখন ছক কষে
-----"খুব সাবধানে চলতে হবে আমাদের ,খবর পেয়েছি পুলিশ আমাদের বোধহয় সন্দেহ করছে,লোক লাগিয়েছে!সতর্ক থাকো ,এই জায়গাতে আর মিটিং করা যাবেনা । অন্য জায়গা খুঁজতে হবে । দেবব্রত তোমার কিছু বলার আছে?"

-----"যাকে যে যে কাজ দেওয়া হয়েছে করতে থাকো । বাইরে থেকে আমরা শুধুই সাধারণ ছাত ,যদিও কেউ ধরাও পড়ে যাও মুখ খুলবেনা । শেষ হয়ে যাবে তবুও"।
মিটিং শেষ করে বাড়ি ফেরার মুখে রোজকারের মত হৈমদের ছাদের দিকে তাকালো দেবব্রত ,ছাদ অন্ধকার!হৈম নেই তো আজ!সেকি ?কয়েকমাস ধরে একদিনও তো না দাঁড়িয়ে থাকেনি মেয়েটা!
--- "দেবব্রতদা?"
মেয়েলি কন্ঠস্বরে ছাদের থেকে চোখ নামিয়ে মাটিতে ফেলে দেবব্রত ,
--- "একি হৈম তুই?এখন এখানে?"
---"আমি পিছনের দরজা দিয়ে লুকিয়ে এসেছি দেবব্রতদা,লুকিয়ে । মানে আমি মানে..."

--- "কি মানে মানে? কি হয়েছে হৈম?"
----"এই চিঠিটা তোমার জন্য,পড়ো। আমি কাল স্কুল ছুটির পর উত্তরদীঘির মাঠে বুড়োবট গাছের তলায় তোমার জন্য অপেক্ষা করব,চলি.."
ছুটটে পালিয়ে চলে যায় হৈম!গলির এই দিকটা নির্জন অন্ধকার,কেউ আসেনা তেমন ।দেবব্রত জানে চিঠির মধ্যে কি লেখা আছে,বিপ্লবে ভালবাসার কোন জায়গা যে নেই!!!বুকের মধ্যে একটা ঝড় ওঠে দেবব্রতর;মেয়েটার এলেম আছে!কট্টরবাদীর মনেও ঝড় আনাতে পারে। পরদিন ছুটির পর বুড়োবটগাছের তলায় একলা দাঁড়িয়ে হৈম । এদিকটায় ভুতুড়ে বলে দুর্নাম আছে;কেউ আসেনা তেমন!বাড়িতে বলেছে বন্ধুর বাড়ি ব্রত উদযাপন,শাড়িতে চোরকাঁটা আটকে থামতে বলে;দুই দিকের বিনুনি ঈশানকোণে মেঘ নামায় । বিকেল শেষ হয়ে আসছে মেঘের সরণী বেয়ে,তার মানে দেবব্রতদা আর আসবে না!ও ভালবাসে তাই বলে দেবব্রতদাও ওকে ভালবাসবে নাকি!হঠাৎ ভীষণ একটা কান্না উগড়ে আসতে চায় বুক ঠেলে,বাড়ি ফেরার জন্য পিছন ঘুরতেই ভীষণ পুরুষালি একটা আওয়াজে সারা গায়ে কাঁটা দেয় হৈমর ।দেবব্রতদা!
----"হৈম চিঠিতে এসব কি লিখেছিস?এখন তুই নেহাতই ছোট"

------"দেবব্রতদা,জানি তুমি আমায় পছন্দ করোনা।বিশ্বাস করো,আমি বলতাম না।কিন্তু তবু কেন বললাম জানিনা,রাগ কোরোনা,আমি কোনদিন আর তোমার সামনে আসব না" ছুটে গিয়ে কয়েক হাত দূরে যখন হৈম, পিছন থেকে দেবব্রতদার গলার আওয়াজ ভেসে আসে গমগমিয়ে
----"তুই জানিসনা আমি কি করি,তাই এসব স্বপ্ন দেখছিস আমায় নিয়ে,হৈম আমার দুনিয়ায় স্বপ্নের কোন দাম নেই,আমি বিপ্লব বুঝি মাটিতে দাঁড়িয়ে।তাছাড়া আমার জীবনের কোন ঠিক নেই।এখন এখানে দাঁড়িয়ে রাতে বেঁচে থাকবই তার মানে নেই।এসব নিয়ে আর ভাবিসনা হৈম।ফিরে যা নিজের দুনিয়ায়"

----"আমি সব জানি দেবব্রতদা..সব জেনেই তোমায় মনের কথা বললাম।তুমি আমার কাছে স্বপ্ন এটা ঠিক,যদিও জানি তুমি নিজেকে নকশাল বল বাস্তব ভালবেসে.."
বিকেলের আলোটা ঝুপ করে হারিয়ে গেল,ঐ বটগাছের তলায় স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে দেবব্রত..হৈম চলে গেছে অনেকক্ষণ হলো..মেয়েটা সব জেনেও..কিন্তু একথা জানার পর নিজের বাবাই তো দেবব্রতকে ঘৃণা করে..হৈম তবুও!! আচ্ছা মেয়েটা জানল কি করে?

কলকাতা গিয়েছিল দেবব্রত,বন্ধুর ভাড়া বাড়িতে,আধখোলা মশারির আড়ালে তখন বিপ্লব উঠেছে,ছাত্র আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে । মাও সে তুং এর নামের আড়ালে নিজের মনের অজান্তেই একটা নাম কাঠকয়লার আঁচড়ে দেওয়ালে লিখে ফেলে দেবব্রত,"হৈমন্তী"!
মফস্বলে ফিরতেই দেখে সারাটা পাড়ার রূপটা বদলে গেছে,ডন বৈঠকের আখড়া ফাঁকা ।মহিলাদের মজলিশে গন্ধতেলের যাদু ঘুমচোখে অস্ত যায়!অনুরোধের আসর ছেড়ে সবাই এখন খবর শোনে,জেল বন্দির হিসেব অঙ্ক হারায়..
মিটিং এ সেদিন আকাশ ভেঙে পড়ে । দলের নেতা অমর গাঙ্গুলী তখন ফিসফিসিয়ে বলে চলে
-----"তোমাদের আমি বলেছিলাম মনীষীদের মূর্তিটা ভেঙোনা,শুনলে না!বললে এটাই তোমাদের পথ,দেওয়ালে পোস্টার লাগাতে গিয়ে মাঝরাতে দুজন ধরা পড়ে গেছে,পুলিশ সব জেনে গেছে,যখন তখন যা তা হতে পারে । দেবব্রত!তোমাকে বাঁচতেই হবে।আমি জানি তুমিই পারবে আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিতে । কাল রাতের ট্রেনেই কলকাতা চলে যাও ।"
গত দুদিন ছাদে দাঁড়াতে পারেনি হৈমন্তী!কয়েকদিন গলির সামনে দিয়ে যায়নি দেবব্রতদা ঐ ঘটনার পরে,যদিও রোজ দাঁড়িয়ে থেকেছে ছাদে হৈমন্তী।গত দুদিন ধরে এলাকায় অঘোষিত কার্ফু!নকশালদের পোস্টার পড়েছে দেওয়ালে;ভয়ে ঘরে ঘরে আতঙ্ক।যখন তখন পুলিশের গাড়ি এসে থামে,টর্চের আলো করিবরগায় এসে পড়ে মাঝরাতে ।
পুলিশ নাকি ওদের ধরে ফেলবে,পাশের ঘরে বাবার আওয়াজ কানে আসে...

-----"বিপ্লবের নামে অরাজকতা চালাচ্ছে সব,ভাঙচুড় যা পারছে তাই করছে।এই করে কিছু হয়?অল্প বয়সী ছেলেগুলোর মাথায় ভূত চেপেছে,মরবে;সব মরবে"
বৃহস্পতিবারের পাঁচালি তখন পিলসূচের নীচে গন্ধআতর ঢালে।কিচ্ছু বুঝতে পারেনা হৈমন্তী!কিচ্ছুটি না । কে ঠিক কে ভুল?বাবা বলে নকশালরা ভুল,অথচ দেবব্রতদারা বলে ওরা সাম্য আনবে!সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে যায় হৈমন্তীর!দেবব্রতদা,ওর গুলি লাগবে না তো?জেল হবে না তো!শুধু পাগলের মত মুখে কাপড় দিয়ে কান্না আটকিয়ে ভগবানকে একটা চিঠি পাঠিয়ে চলে বারবার
"ঠাকুর দেবব্রতদার যেন কিচ্ছুটি না হয় ঠাকুর,ওকে সুস্থ শরীরে বাঁচিয়ে রাখো ভগবান।আমায় ভালবাসতে হবে না ওকে।কিন্তু ও যেন ভাল থাকে"।
পরদিন স্কুল শেষে গলির মুখটা ঘুরতেই একটা হাত হিচড়ে হৈম টেনে নেয় আমবাগানের অন্ধকারে। ভয় পেয়ে চিৎকার করতে যাওয়ার মুখেই সেই মুখটা দেখে থেমে যায় হৈম!!

---"দেবব্রতদা!!!!তুমি"??
হৈমকে ঘোরের মধ্যে রেখে দেবব্রত বলে চলে
-----"পুলিশ সব জেনে গেছে রে হৈম । আমায় গা ঢাকা দিতে হবে, আজ রাতের ট্রেনে কলকাতা যাব । জানিনা আর ফিরব কিনা,বেঁচে থাকব কিনা,তোর সাথে আর দেখা হবে কিনা,তাই একটা কথা বলে যেতে চাই, আজ না বললে হয়তো আর কোনদিন বলা হয়ে উঠবে না।"

হৈমর বুকে তখন সমুদ্রমন্থনের ঢেউ উঠেছে

----"কি দেবব্রতদা?"

--- "যুদ্ধের রক্তমাটিতে বসন্ত নামিয়েই ছাড়লি হৈম?বারুদের গন্ধে গোলাপের আতর পারফিউম ঢেলে দিলি?আমার মত একটা মানুষ যে বিপ্লব বাদে কোনদিন কিছুটি বোঝেনি,যে হাত দিয়ে slogan লিখতাম সেই হাতে তোর নামটা লেখালিই?কি করে পারিস বলতো?এতটুকু বাচ্চা মেয়ে?"

----"আমি কিছু বুঝতে পারছি না দেবব্রতদা তোমার কথা"

"ভালবাসি হৈম তোকে,কেন জানিনা! তবু বাসি জানি"
হৈমর হাতটা কখন দেবব্রতর হাতটাকে শক্ত করে ধরে ফেলে জানেনা হৈম,
দেবব্রত বলে যায়
"ভাল থাকিস,নিজের খেয়াল রাখিস,যাই রে"
হৈমর কান্নায় তখন কন্ঠরোধ করেছে তবুও বলে চলে;
"যাই বলতে নেই দেবব্রতদা,বল আসি,গলির কোণায় টর্চটা রেখে দেব । যাওয়ার সময় নিয়ে যেও।তোমার কাজে লাগবে।কেমন?"
দেবব্রত যেমন ঝড়ের মত এসেছিল,চলে যায় ঝড়ের মত,যাত্রাপথের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে হৈম...যে ছেলে কলেজ মাঠে বক্তৃতা দিয়েছে স্বাধীনতা দিবসে চোখে আগুন ঢেলে,সেই ছেলের চোখে আজ আগুনধোয়া জল ? মনে মনে বলে চলে হৈম
----"আমার ভালবাসা তোমায় দুর্বল না,আরো অনেক বেশী শক্তিশালী করুক দেবব্রতদা ।জানিনা তুমি যে পথ ধরেছ ঠিক না ভুল । শুধু এইটুকু জানি তোমার চোখে আগুনটাই মানায়,জল না ।"

চাঁদটা ঢেকে গেল মেঘের আড়ালে,হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন ধাক্কা দিয়ে ওঠে

--- "পিসিমণি ও পিসিমণি,কি গো ? সেই থেকে ডাকছি দরজা খুলছনা কেন গো ?"
ভাইপোর ডাকে সত্তরের দশক থেকে 2018তে পা রাখে হৈমন্তী !টিভিতে কোন এক কলেজের ছাত্রধর্মঘট দেখতে দেখতে বহু যুগ আগে নিজের মেয়েবেলায় কবে চলে গিয়েছিলেন খেয়ালই করেননি হৈমন্তী.
বিয়ে দিয়েছিল বাড়ি থেকে হৈমন্তীর ঐ ঘটনার পর, কয়েক বছরের মাথায় স্বামী মারা যায় ,নিঃসন্তান করে দিয়ে..স্বামীর চাকরিটা পেয়ে সেই থেকেই দাদার কাছে..
টিভিতে তখন কোন এক ঘটনায় অগুন লাশের ছবি breaking newsএ । শরীরটা কেমন যেন করতে লাগল হৈমন্তীদেবীর !
দেবব্রতদা সেই চলে যাওয়ার পর শুনেছিল হৈমন্তী গুলি লেগেছিল নাকি দেবব্রতদার বুকে ,

রেললাইনের ধার...ঘেঁটুবনে জোনাকি জ্বলে..একটা লাশ পড়ে আছে ঈষৎ আড়াআড়ি..সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি ,উসকোখুসকো চুল,তিনচারদিনের না কামানো দাঁড়ি চাঁদের আলোয় বড্ড স্পষ্ট লাগে,ঝোলাব্যাগ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বিপ্লবের খসড়া অদৃষ্টে রক্ত লেগে..বুকে জড়ানো বিপ্লবের slogan এর কোরা কাগজ..আর একটা টর্চ..তখনও জ্বলছে..জ্বলেই চলেছে!একটা হাত দিয়ে টর্চটা বুকে আঁকড়ে ধরা!
চোখটা জোরে বন্ধ করে দেয় হৈমন্তী । পাশের ঘরের কবীর সুমনের গলার আওয়াজ,টর্চ, রেললাইন ,নকশালবাড়ি,ছাত্রআন্দোলন দেবব্রতদা মিলেমিশে এক হয়ে হৈমন্তীকে নিয়ে চলে উত্তরদীঘির বটগাছের ছায়ায়,
গানের আওয়াজ সপষ্ট হয়ে অর্ধবৃত্তের দুনিয়া বানায় বিদ্রোহরাজনীতির রসুইঘরে ..

"ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড কর প্রেমের পদ্যটাই বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি শুধু তোমাকেই চাই।"

সমাপ্ত

© FB.com/debarati.goswami.12



Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn Pinterest StumbleUpon Email



~~ জলছবি ~~